Bee ধারাবাহিক উপন্যাসঃ নাইয়র (পর্ব-তিন) Good Luck

লিখেছেন লিখেছেন মামুন ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৭:০৩:৩৭ সন্ধ্যা



বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল তোলার হিড়িক পড়ে গেছে। তবে এই লাইনটার ভিতরে যে আবেগ ও সুর মুর্ছনা রয়েছে, ঠিক তাতে অনুপ্রানিত হয়েই সবাই এই ফুল ছিড়ছে না। অধিকাংশই অন্যের দেখাদেখি পেতে চাইছে। ছোট ছেলেদের দলই এই কাজে অধিক উৎসাহী। বৃষ্টি শুরু হলে আর গাছে ফুল ধরলেই ওদের গাছতলায় আনাগোনা বেড়ে যায়। ডালসুদ্ধ ভেঙ্গে নিয়ে আসে। আর রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে বাড়ি ফেরা কোনো পথিক চকিতে গাছের দিকে তাকায়। দুষ্ট ছেলের দলের নিকট ইচ্ছের অজান্তেই একটা ফুল চেয়ে বসে। তবে কি এটাই ঠিক, এই সময়টাতে আমাদের অবচেতন মন কদমের অপেক্ষা করে?

আবার স্কুল পলাতক কোনো ছেলে লুকিয়ে নতুন বিড়ি বা সিগ্রেট ফুঁকছে... একটু ঘন জঙ্গলে বা বাগানবাড়ীর অব্যবহৃত কোনো নিভৃত কোণে। তারও হঠাৎ ইচ্ছে হল,কদম লাগবে। যেই ভাবা সেই কাজ। সাথের হতচ্ছাড়াকে সঙ্গে নিয়ে বেপারী বাড়ির কবরস্তানের পাশের কদম গাছটির নীচে হাজির। নিজে ওঠে না। সঙ্গীকে গাছে উঠিয়ে ছিড়ে আনতে বলে। এই ফুলই শিকদার বাড়ীর অষ্ঠম শ্রেণী পড়ুয়া মেয়েটির পড়ার টেবিলে দেখা যায় সুর্য পাটে যাবার আগে। খুব যত্নে রেখে দেয়া... যেন কত সাধনার জিনিস! এভাবেই বর্ষা আর কদম ফুল- আমাদের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। হোক না তা শহর কিংবা গ্রামে। সব যায়গায়ই তো মানুষের ভিতরে হৃদয় ই থাকে, নাকি অন্য কিছু?

হাঁটু পর্যন্ত কাঁদায় মাখামাখি হয়ে কবি মুজিবর মোল্লা শ্রীরামকাঠী বাজার থেকে ভিজে ভিজে ফিরছে। তবে পথের এই কষ্টকর পদযাত্রা তাঁকে একটু ও নিরাশ করেনি...অথবা পারেনি মেজাজ খারাপ করা অনুভুতিতে আচ্ছন্ন হয়ে জনপ্রতিনিধিকে একটি বিশেষ শব্দে সম্বোধন করাতে। আসলে সেই শুরু থেকেই ওর মাথায় বর্ষা আর কদম এমন ভাবে ঢুকে গেছে যে, চলার পথ আর আশেপাশের কোনো কিছুই তাঁকে প্রভাবিত করছে না। ওর পাশ দিয়ে কয়েকজন দ্রুত হেঁটে চলে গেলো। দু'জনের মাথায় বিশাল কচু গাছের পাতা। ছাতা হিসাবে ব্যবহার করছে। একজন পলিথিন দিয়ে মাথাকে এমনভাবে ঢেকে নিয়েছে যে, বৃষ্টি নিজেই এতোটা ভড়কে গেছে, পারলে ওর মাথার আশপাশ দিয়েও যাবে না । মুজিবর নিজে অবশ্য ছাতা মাথায় দিয়ে আসছে। একটা কোনার শিক যে সূতার সাথে সেলাই অবস্থায় থাকে, সেটা ছিড়ে গেছে। এখন এক কোনা বেঢপ ভাবে ভাঙা হাতের মত বাঁকা হয়ে ঝুলছে। জোর বাতাস ওর ছাতাটিকে কয়েকবার উড়িয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হল।

শিকদার বাড়ির আগেই মোল্লা বাড়ি। ওর নিজের বাড়ি। ওরা মোল্লা বংশ। শিকদাররা ওদের আত্মীয়। মুজিবরের মামা বাড়ী। পারুল ওর ফুফাতো বোন। পাশাপাশি দুই বাড়ী। চলতে চলতে থমকে যায় কবি মুজিবর। সবাই ওকে কবি ডাকতে ডাকতে সে নিজেও তাঁর নামের সাথে এই উপাধিটা লাগাতে দ্বিধা করেনা। পারুল! পারুলকে কেন মনে হল? আরো তো ওর ভাই-বোন রয়েছে... তাঁদের কথা কেন মনে হল না? এতোক্ষণ বর্ষা-কদম এগুলোর সাথে সাথে তাহলে ওর অবচেতন মনে পারুল ও কি সেই বাজার থেকেই ছিল? নিজেকে জিজ্ঞেস করে মুজিবর। বলো, বলো কবি? সেই বাজার থেকে নাকি আরো অনেক আগে থেকে? হ্যা... আট আটটি গ্রীষ্ম পেরিয়ে কদম নিয়ে উচ্ছ্বাস করার সেই সময়কে পেরিয়ে...তারও আগে থেকেই পারুল হৃদয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে জড়িয়ে আছে। নির্ভেজাল স্বীকারোক্তি! কিন্তু অনেক দেরী হয়ে গেছে না? না, সময় আপেক্ষিক... এর শুরু বা শেষ নাই। যখনই তোমার মনে হবে শুরু করা যায়- তখনই সময়ের শুরু। দেরী বলতে কিছু নাই। কৃষ্ণচূড়া গাছটির সামনের কালভার্ট পার হবার সময় এক দমকা বাতাস ওর হাত থেকে ছাতাটি ঊড়িয়ে নিয়ে একেবারে ক্লাব ঘরটির দরোজার সামনে নিয়ে ফেলে।

মেয়েলি হাসির শব্দে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বাস্তবে ফিরে এলো সে।

যার কথা এতো তন্ময় হয়ে ভাবছিল, সে-ই ওর দরোজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে ওর দরোজার চৌকাঠ ও উপরের সামান্য শেডের আশ্রয়ে থেকে পারুল বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পেতে চাইছে। কবি'র এই অবস্থা দেখে না হেসে পারল না। বৃষ্টি উপেক্ষা করে একটু এগিয়ে ছাতাটি হাতে তুলে নেয়। কবি'র হাতে দিতে দিতে বলে,

- কোনো কিছুই দেখছি তোমার হাতে থাকে না কবি!

কিছু না বলে ছাতা হাতে নেয় সে। চাবি বের করে দরোজা খোলে। নিজে ভিতরে ঢুকে বাইরে দাঁড়ানো পারুলের দিকে তাকায়। একটু ইতস্তত বোধ করে। ভিতরে ডাকবে কিনা? ইতোমধ্যে সে ভিজে একাকার। বেশীক্ষণ এভাবে থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে।ঘরের ভিতরে ছাতাটি মেলে দিয়ে ওকে বলে,

' ভিতরে আসবে?'

চকচকে চোখে একঝলক হাসি নিয়ে পারুল বলে,'কেন?'

এই প্রশ্নের কি উত্তর দিবে ভেবে পায় না। তবুও বলে,' তোমার ঠান্ডা লাগবে যে।' এবারে পারুল ভিতরে আসে... ওর একমাত্র খাটটির উপরে বসে পা ঝুলিয়ে দেয়। তারপর বলে,'আমাকে ভিতরে না ডেকে তোমার ছাতাটা দিলেই তো বাড়ি যেতে পারতাম!' মুজিবর কথা না বলে মেলে দেয়া ছাতাটি বন্ধ করে পারুলের দিকে বাড়িয়ে দেয়। কিছুক্ষণ কবির চোখে চোখে তাকিয়ে থাকে পারুল। কেন জানি মুজিবর চোখ নামিয়ে নেয়। ছাতাটি আগের মত রেখে দিয়ে পারুল বলে,' তোমাকে সব কিছু বলে দিতে হয় কেন কবি? নিজের থেকে কিছুই কি পারো না তুমি?' একটু হাসে মুজিবর। একটা গামছা বাড়িয়ে দেয় পারুলের দিকে। যেন যেটুকু পারে বৃষ্টির ছোঁয়া মুছে ফেলুক। নিজেও হাত দিয়ে মাথার চুলে এক বিশেষ পদ্ধতিতে ধাক্কা দিয়ে দিয়ে পানি ফেলে দেয়। টেবিলের একমাত্র চেয়ারটিতে বসে। এবার বলে,

' আমি কিছুই পারি না তোমাকে কে বলল? আমি কবিতা লিখতে পারি... তোমাকে ছুঁয়ে দেয়া নির্লজ্জ বৃষ্টির তোমার শরীরে একে দেয়া অদৃশ্য আল্পনাকে আমার লেখায় ফোটাতে পারি।'

- হ্যা, আপনি অনেক পারেন।

'ব্যঙ্গ করলে?'

- না, রঙ্গ করলাম। তোমার সাথে তো আমার রঙ্গ করার সম্পর্ক।

মুজিবর ভেবে পায় না কি বলবে। এই মেয়ের প্রতি ওর যে একটা বিশেষ মায়া রয়েছে, সে কি তা জানে? না জানাই ভালো। মায়া কাউকে বুঝতে না দেয়াই ভালো। কারন একবার বুঝিয়ে দিলে, তাঁর থেকে ফিরে আসা অনেক কঠিন হয়ে যায়।

কিন্তু পারুলের থেকে ওর ফিরে আসার দরকারটাই বা কি? সে কি পারুলকে এখনো ভালোবাসে? এখনো? তার মানে ওকে আগেও ভালবাসত! তবে সময় থাকতে সে প্রকাশ করেনি কেন? তবে কি সে একজন ভীরু? নিজের মনে মুহুর্তের ভিতরে কত রকম প্রশ্ন জেগে উঠে। পারুলের কথায় সম্বিৎ ফিরে পায় অবশেষে।

- কবি। তোমার ক্যাসেট প্লেয়ারটাও কি তোমার মতো? নাকি বাজে?

' ওটা তাঁর কাজ ঠিক মতই করে। আমার মত না।'

ক্যাসেট প্লেয়ার টি অন করে দিতেই সাগর সেনের গলায় রবি ঠাকুরের অমীয় বাণী বেজে উঠে-

" আমি তোমার প্রেমে হব সবার কলংকভাগী" ... ... ...

বাহিরে তুমুল বর্ষণ... কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে ক্লাব ঘরটির টিনের চালে বৃষ্টির কান্না... ঘরের ভিতরে একজন হৃদয়ভাঙা যুবতী কন্যা... তন্ময় হয়ে শুনছে এক বিশ্ব কবির... একজন প্রেমিক পুরুষের হৃদয় উজাড় করে লেখা গান!

গান শেষ হলে পারুল নিজেই ক্যাসেট বন্ধ করে দেয়। বলে, ' উফ! অসম্ভব সুন্দর একটা গান! আমার খুব ভালো লাগে।' কবি মুখে বলে, 'হ্যা!' আর মনে মনে বলে,' তোমাকেও আমার খুব ভালো লাগে পারুল!... গানের মতো ভালো লাগা নয়... গান শুনলে হৃদয়ে যে অদ্ভুদ ভাব জাগে তাঁর মত না... একেবারে অন্যরকম।'

আজ কবি মুজিবরের কি হয়েছে কে জানে। সে কথা বলে যেতেই থাকে-

' তবে অসম্ভব সুন্দর বলতে কিন্তু কিছু নেই পারুল। যা অসম্ভব- তাঁর কোনো অস্তিত্ব নেই। আর অস্তিত্বহীন সুন্দর আসলে মানুষের কল্পনার সীমাকে অতিক্রম করতে চাওয়া ছাড়া আর কিছু না।'

- হুম, বুঝলাম।

' তুমি কি গান গাইতে জানো পারুল?'

- আমি গুনগুন করি- গান গাইতে পারি না। কেন, হঠাৎ এই প্রশ্ন?

' আমার একটা গল্পে নায়ক তাঁর হারিয়ে যাওয়া নায়িকাকে অনেক দিন পরে কাছে পায়। কিন্তু তখন সে অন্য কারো হয়ে গেছে। সেই অবস্থায় তাঁদের দেখা হয় এমনই এক পরিবেশে। সেখানে নায়ক তাঁর প্রিয়াকে এই কথা জিজ্ঞেস করে।'

- কিন্তু কেন করে?

' সে মেয়েটিকে একটি গানের কয়েকটি কলি গেয়ে শোনাতে বলে!'

- কোন গান? লাইনগুলো বল...

' বঁধু কোন আলো লাগল চোখে গানটি। তবে এই লাইনগুলো ... ছিল মন তোমারি প্রতীক্ষা করি... যুগে যুগে দিনরাত্রি ভরি... ছিল মর্মবেদনা ঘন অন্ধকারে... জন্ম জনম গেলো বিরহ শোকে... বঁধু কোন আলো লাগলো চোখে...'

-তারপর কি হল? মেয়েটি গাইলো? গুনগুন করল?

' নাহ! মেয়েটি কিছুই করল না। চুপচাপ শুনতে থাকলো। ছেলেটি বলে যেতে থাকে... আমার খুব কষ্ট হয় এই লাইনগুলো শুনলে... তুমি যদি আমার হতে... আমাদের প্রথম রাতে আমি তোমার চোখে চোখ রেখে এই গানটি গাইতাম!'

- তারপর?

' শুনে মেয়েটি বলে, খুব গভীর কষ্টের কোনো গান এখন শুনি না। চাই ও না... কে হায় হৃদয় খুড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে?'

ওরা দুজন চুপ করে থাকে। পারুল জিজ্ঞেস করে, ' এখন কীভাবে কাটছে তোমার দিনকাল?' একটু করুন হেসে কবি বলে,' আমার আর দিনকাল! রবি ঠাকুরের লেখা পড়ছি আর সেগুলোর ভিতরের কথা ভাবছি। জানো, মাঝে মাঝে ভাবি, এক রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ভেবে ভেবে... তাঁর গান-কবিতা রিসার্চ করে করেই তো কয়েক জন্ম কাটিয়ে দেয়া যায়। তবে অন্য কবি-সাহিত্যিকদের লেখায় মন বসাবো কবে?

অনেকক্ষন কেটে যায় নিঃশব্দে!

একসময় কবি পারুলের দিকে তাকিয়ে দেখে সে নিঃশব্দে কাঁদছে। কান্নারত পারুলের এই মুর্তি কবি মুজিবরের হৃদয়কে এক বর্নাতীত মায়ায় জড়িয়ে ফেলে। সে মুগ্ধ হয়... ক্রমে মুগ্ধ থেকে মুগ্ধতর পর্যায়ে চলে যায়। একটু কাছে যায়। পারুলকে ছুঁয়ে দিতে গিয়েও ছোঁয় না। তবে পারুল মুখ তুলে ওর দিকে তাকায়। কবি বলে-

' এখনো হৃদয়টা আছে বলেই কাঁদতে পারছ। কিন্তু হৃদয়কে মরে যেতে দিচ্ছ কেন? তোমার হৃদয় দিয়ে অন্য কারো হৃদয়ের রোগ তো সারিয়ে তুলতে পারো?'

- আমি আর কষ্ট পেতে চাই না ... আমি আমার ভালোবাসাটুকু একজন কেন্দ্রিক করে রাখতে চাই না... আমি মানুষ ভালোবাসি... একজন পুরুষ মানুষকে না!

' হুম... তুমি একজন মহান নারী হতে চাইছ?'

- নাহ! আমি খুব সাধারণ ও তুচ্ছ একজন।

' তোমার এই কথাটিও ভুল। সাধারন রা হল অতি-অসাধারণ। তাই সকলের কাছে ওরা সাধারণ। কারন বেশীর ভাগই তুচ্ছার্থে সাধারণ।'

- আমি একজনকে ভালোবেসেছিলাম, সে নিজেকে প্রকাশ করেনি... জানি না কিসের ভয় ছিল তাঁর। আর যাকে বিয়ের পরে ভালোবাসতে চাইলাম... সে যেতে যেতে বলে গেছে কতটা তুচ্ছ আর অপাংক্তেয় আমি...

' একজন মাহতাব-ই কি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী-গুনী কিংবা প্রেমিকশ্রেষ্ঠ অথবা দার্শনিক নাকি? যে ওর কথাই স্বতঃসিদ্ধ?'

- আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা আর ভালোবাসা দিয়েও আটকাতে পারিনি তাঁকে... সুতরাং সে নিশ্চয়ই সত্য বলেছে।

' বানর হার চিনে নি বলে ফেলে দেয়া মুক্তোর মালা তো আর অপাংক্তেয় হয়ে গেলো না!'

আর কোনো কথা বলে না ওরা।

টিনের চালে বৃষ্টির আওয়াজ অনেক কমে আসে। তাঁর পরিবর্তে ওদের দুজনের হৃদয়ের আওয়াজ বৃদ্ধি পায়। সেই আওয়াজ ওদের দুজনকে হারিয়ে যাওয়া কিছু একটা নতুন ভাবে খুঁজে দেখার আহ্বান জানায়।

তবে ওরা দুজন সময় নেয়।

প্রকৃতি তাড়াহুড়া পছন্দ করে না।

... ... ...

নিজের অফিস থেকে বের হল মোতাহার।

মটরবাইক অফিসের সামনে পার্ক করাই পড়ে রইলো। মনটা আজ আকাশের মতো হয়ে আছে। বিষন্নতায় ছাওয়া... কালো অন্ধকার গ্রাস করতে চাইছে। এক অজানা শংকা থেকে থেকে মনকে অশনি সংকেত দিয়ে যাচ্ছে।

হেঁটে হেঁটে আউয়াল খাঁর চায়ের দোকান পর্যন্ত এলো। সাধারণত সে চা খায় না। ধুমপান করে না। একটা রুটীন মাফিক জীবন এই গ্রামে বসেও মেইনটেইন করে চলেছে। তবে ইলেকশনের সময় ওকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। তখন সমর্থকদের নিয়ে বাড়ি বাড়ি যাওয়া... রাত জেগে জেগে কত পরিকল্পনা... চায়ের দোকানে সময়ক্ষেপন... কাপের পর কাপ! সে এক সময় গেছে। কিন্তু এখন?

যে উদ্যম নিয়ে চেয়ারম্যান হয়েছে... চোখে স্বপ্ন বুনেছে নতুন কিছু করার। কিন্তু কিছু মানুষের বিরোধীতার কারনে সব কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।

'আহো ভাইগ্না, একটু বইয়া যাও।' - আউয়াল খাঁর ডাকে চিন্তার জাল ছিন্ন হয় এবং ফিরে তাকায়। চায়ের দোকানে সবসময়ই কিছু মানুষ থাকে। সকাল-সন্ধ্যা-দুপুর-বিকেল এমনকি গভীর রাতেও যদি খোলা থাকে, কেউ না কেউ থাকবেই। তবে কি অলস-আড্ডাবাজ মানুষের সাথে চায়ের দোকানের কোনো নাড়ীর সম্পর্ক রয়েছে?

সম্পর্কে আউয়াল খাঁ মোতাহারের মামা। এখন যদিও চেয়ারম্যান হয়েছে সে। কিন্তু এই সহজ-সরল মানুষগুলোর কাছে সে তো সেই আগের মোতাহার ই রয়েছে। লম্বা দু'টো বেঞ্চ। একটা থেকে প্রয়োজনের অধিক যায়গা ছেড়ে দেয়া হল তাঁর জন্য। একজন বয়স্ক পরিচিত তার কাঁধ থেকে গামছা নামিয়ে যায়গাটুকু মুছে দিলো।

'আহহা, কি করেন...' বলে উঠলেও মনের অজান্তে কি একটু ভালো লাগে না মোতাহারের? তবে পরক্ষনেই একটা দুঃখবোধও ওর ভিতরে কাজ করে। একটু আগের ভালোলাগা টুকুর জন্য এই দুঃখ। সে তো এইসব মানুষের সেবা করার জন্য এই পদে নির্বাচিত হয়েছে। এখন তাঁরা তার সেবা করছে দেখে কেন আনন্দ জাগবে মনে?

এক কাপ রং চা ওর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে আউয়াল খাঁ জানতে চায়, 'কই রওয়ানা দিলা ভাইগ্না?' খুব ভালো রং চা বানায় এই লোক। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে তৃপ্তির ভাব আসে মনে। অজান্তেই ফ্রেস হয়ে যায় দেহমন। একটু আগের মনমরা ভাব আর থাকে না। ' শিকদার বাড়ির কাছারিতে যাচ্ছি মামু। আজ স্কুলের ব্যাপারে কথা হবার কথা।'- আউয়াল খাঁর দিকে তাকিয়ে বলে মোতাহার। চোখ বন্ধ করে জিভ কাটে আউয়াল খাঁ। বলে, ' আমারও তো যাবার কথা। কি করি এখন।' একটু দূরে বসে থাকা একজনের দিকে চোখ পড়তেই আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে উঠে সে। লাটিম নিয়ে খেলতে থাকা কয়েকজনের ভিতর থেকে ১২-১৩ বছরের ছেলেটিকে ডাকে। ওর ছেলে। মাঝে মাঝে প্রয়োজন হলে ওকে দোকানে বসিয়ে যায়। মোটামুটি চা বানাতে পারে।

দু'জনে হেঁটে হেঁটে কালি মন্দির পর্যন্ত আসতেই সাথে আরো দু'জন জুটে যায়। তারাও ওদিকেই যাবে। এদের সাথে কথায় কথায় পথ খুব দ্রুত ফুরিয়ে আসে। শিকদারদের ঘাটের সামনে তালগাছটির পাশে এসে থামে। শেষে ডানদিকে চলে যাওয়া কাছারি ঘরের রাস্তাটি বেছে নেয় ওরা।

গ্রামের বাড়িগুলোতে একটা কাছারি ঘর থাকবেই। এটাকে বাইরের ঘর কিংবা গেস্ট রুমও বলা যায়। শিকদারেরা মোটামুটি প্রভাবশালী। অনেক গুলো ঘর নিয়ে এই বাড়ী। কাছারি ঘরটাও বেশ বড়। অনেক উঁচু দাওয়া। সিমেন্টের সিড়ি বানানো হয়েছে। ভিতরে দু'সারি করে মানুষ বসে আছে। এক মাথায় একটা বেশ বড় টেবিল। আর নীচে পাটি বিছানো রয়েছে। সেখানেও কিছু মানুষ বসা দেখতে পেল মোতাহার। ওর জন্য হাবিব মুন্সীর পাশে একটা খালি চেয়ার রয়েছে। সেদিকে এগিয়ে গেলো। সাথের মানুষগুলোর যায়গা হল শীতল পাটিতে। তাঁরা সেখানে গিয়েই বসে পড়ল।

মোতাহার বসতেই সাবেক চেয়ারম্যান মালেক শিকদার টিপ্পনি কাটে,' অনেকক্ষন বসিয়ে রাখলে হে।' তাঁর দিকে তাকিয়ে একটু হেসে মুখ ফিরিয়ে নেয় মোতাহার। গলা খাকারি দিয়ে বলে, 'আপনারা সবাই এসেছেন, আমি খুব খুশী হয়েছি। আজ এখানে আমরা সবাই কেন একত্রীত হয়েছি তা কি আপনারা জানেন?' সকলে সমস্বরে না-বোধক উত্তর দেয়। সবার দিকে ঘুরে ঘুরে তাকায় মোতাহার। মালেক শিকদার, তারেক মেম্বার, সাহাবুদ্দীন বি,এস,সি, কোব্বাত মিয়া... এরা ছাড়া আর সবাই সাধারণ মানুষ। সাধারণ-কোমল তবে প্রয়োজনে এরাই ইস্পাতদৃঢ় সবল হয়ে উঠবে। সবাই মোতাহারের দিকে কিছু শোনার জন্য... ভালো কিছু শোনার আশায় উন্মুখ হয়ে আছে।

মোতাহারের মনের ভিতরের বোনা অনেক স্বপ্নের মধ্যে এটাও অন্যতম এক স্বপ্ন। গ্রামে শিশুদের জন্য একটা ভালো স্কুল করা। কিন্ডারগার্টেন জাতীয়। ওদের একটা আধা-সরকারি প্রাইমারী স্কুল রয়েছে। তবে তা সেই নাজিরপুরের একেবারে শেষ মাথায়। আর সেখানে শুধু উপ-বৃত্তির টাকা পাওয়ার জন্য সবাই নামেমাত্র ভর্তি হয়ে আছে। মাস গেলে টাকা নিয়ে আসে। আর বাকীটা সময় সারাদিন পথে ঘাটে হই -হুল্লোরে কাটায়। এর গাছের ফল তো ওর বাগানের সুপারি নিয়ে আসার এক দুরন্ত প্রতিযোগীতায় ব্যস্ত সময় কাটে এদের। মধুর শৈশব! আদতেই আনন্দে কাটছে...কিন্তু লেখা-পড়া ছাড়াই। এরাই এই প্রাইমারী থেকে পাস করবে টেনেটুনে... এরপর এলাকার হাইস্কুলে ভর্তি হবে। দু'এক ক্লাস ফেল করে করে এক সময় লেখাপড়ার প্রতি ঘৃণা এসে যা্বে। ছেলেরা তখন বাপের সাথে হাল-চাষে সময় দেবে কিংবা বাজারের মুদী দোকানে বসে বসে পেট মোটা হতে থাকবে ওদের। আর মেয়েরা মায়ের সাথে ঘরের কাজ শিখে। অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে পরের ঘরে চলে যায়। মাঝখান দিয়ে লেখাপড়াটা আর হয়ে উঠে না। কারণ ঐ একটাই। একেবারে প্রাথমিক স্তরের দুর্বল ভিত্তি। এবারে মুখ খোলে মোতাহার, 'আমাদের প্রাইমারি স্কুলের হাল-হকিকত তো আপনাদের সবারই জানা। প্রতিদিন এতো দূরে গিয়ে আমাদের বাচ্চারা পড়ালেখা করতে পারছে না। আর বর্ষার সময়ে তো ঘর থেকে বের ই হওয়া যায় না। তাই আমরা কয়েকজন মিলে এলাকার ভিতরেই একটি কেজি স্কুলের ব্যবস্থা করতে চাই। এ ব্যাপারে আপনাদের মতামত চাচ্ছিলাম।'

আউয়াল খাঁ সবার আগে কথা বলে,'হেইলে তো খুব ভালোই অয়। পোলা-মাইয়াগুলান একটু পড়া-লেহার সুযোগ পায়।' তাঁর কথা শেষ না হতেই সবাই এক সাথে কথা বলে এবং মৃদু গুঞ্জন ওঠে। মালেক শিকদার এবং হাবিব মুন্সীর চোখে চোখে কথা হয়। মালেক শিকদার কথা বলে, 'কেন, আমাদের প্রাইমারী স্কুলে সমস্যা কোথায়? নতুন স্কুল বানালেই কি লেখাপড়ার উন্নতি হবে? সবাই জজ ব্যারিষ্টার হইয়া যাবে?

এবারে পিছন থেকে পারুলের কন্ঠ শোনা যায়। সে ভীড়ের ভিতর থেকে বলে, 'জজ ব্যারিষ্টার না হোক, একজন ভালো মানুষ হয়ে তো হইতে পারবে!' ওর কথা শেষ না হতেই হাবিব মুন্সী বলেন, 'তুমি মাইয়া মানুষ আবার কোত্থেকে কথা বলতে এলে? তোমাকে কে ডাকছে?

মোতাহার বলে, ' আমি ডাকছি পারুলরে। আর এই স্কুল চালাবে তো সে ই।' এবারে হাবিব মুন্সী একটু গলা চড়িয়ে বলে,' মাইয়া মাইনষে স্কুল চালাবে? সে নেতৃত্ব দিবে? আর আমরা বইসা বইসা দেখব?'

ভীড়ের ভিতর থেকে সামনে আসে পারুল। সবাইকে সালাম দেয়। এরপর শান্ত ভাবে কথা বলে, ' আপনি সেই তখন থেকে মাইয়া মানুষ মাইয়া মানুষ করছেন চাচাজী। মাইয়া মানুষ কীভাবে স্কুল চালাবে জানতে চাইলেন। শহরে ভালো ভালো কতগুলো স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মেয়ে তা কি আপনি জানেন? আর নেতৃত্তের কথা বললেন, আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীও তো একজন মহিলা। বিরোধী দলের প্রধান একজন মহিলা। তাদেরকে তো সবাই মানছে। তবে এখানে একটি স্কুলের মতো প্রতিষ্ঠানে আমার থাকাতে সমস্যাটা কোথায়?'

হাবিব মুন্সী প্রথম কিছুক্ষন কথা বলতে পারেনা। শেষে বলে,' বেশী বুইঝো না মাইয়া। বেশী বোঝার জন্যই তো আইজ তোমার এই অবস্থা। স্বামীর ঘর করবার পারলা না। বাপ-মার ঘাড়ে চইরা বইছো আইসা।'

স্কুল বানাতে গেলে গ্রামের প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের কাছ থেকে প্রতিরোধ আসবে। মোতাহারের সাথে আলোচনার সময়ে নেতিবাচক সম্ভাব্য সব দিক নিয়ে ওরা আলোচনা করেছিল। কিন্তু এভাবে ওর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আক্রমন আসবে ভাবেনি। মুখে একটু হাসি ফুটিয়ে সে বলল,' চাচাজী, আমার ভাগ্যে স্বামীর ঘর করা ছিল না। আর আপনি নিজে গিয়েই তো দেখে ছেলে পছন্দ করেছিলেন। এমন ছেলে পছন্দ করলেন... যে সারাদিন মদের নেশায় বেহুঁশ থাকে।'

আবার সকলের ভিতর গুঞ্জন উঠে। মালেক শিকদার কথা অন্যদিকে নেবার চেষ্টা করে,' স্কুল যে করবা, স্কুল ঘর, আরো জিনিসপত্র এবং শিক্ষক- এসব কীভাবে জোগাড় হবে? ফান্ডের ব্যবস্থা কে করবে?'

মোতাহার বলে,'আমি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে অনেকটা হেল্প করতে পারব।'

পারুল ভরসা দেয়,'আমার পরিচিত কিছু এনজিও আছে, যারা প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্কুলের জন্য ফান্ডের জোগান দেয়।' কাঞ্চন মৃধা জানায়, 'আমি স্কুলের জন্য যায়গা দিবো। বিনা শর্তে।' এবারে আউয়াল খাঁ থাকতে না পেরে বলে,' আমরা সবাই মিলে স্কুল করায় সাহায্য করমু। দরকার লাগে গায়ে-গতরে খাডমু।'

মোতাহারের বুক আনন্দে ভরে উঠে। পারুলের দিকে তাকায়। দুজন যে আশা নিয়ে একটা সীমাহীন দূরত্ব পাড়ি দিতে চাচ্ছে- তাঁর শুরুর পথটা যতটা বন্ধুর ভেবেছিল, চলতে গিতে দেখল আসলে ততোটা নয়।

হাবিব মুন্সী দেখে তাঁর হাত থেকে বল বেরিয়ে যাচ্ছে। শেষ চেষ্টা হিসাবে সে বলে, 'তোমরা মিয়ারা দেখি সবাই হুজুগে মাইতা উঠলা। আল্লাহ-খোদার ডর নাই দিলে। পোলাগো লেখাপড়া নিয়া আমার কথা নাই। কিন্তু মাইয়া মানুষের পড়া-লেখা দিয়া কি হবে? ওরা কোরআন-হাদীস শিখলেই তো ল্যাঠা চুইক্যা যায়। এরপর বিয়া দিবা... পর্দা-পুষিদায় থাকবো। নিশ্চিন্ত থাকবা মিয়ারা। তা না এই মাইয়া মাইনষের কথা শুইনা সবাই লাফাইতে আছো দেখি।'

যে মানুষগুলো একটু আগেও স্কুলের পক্ষে তাঁদের সমর্থন দিচ্ছিল, হাবিব মুন্সীর এই কথাতেই তাঁদের অর্ধেকেরও বেশী চুপ হয়ে গেলো। অনেকে বলতে থাকে,' হ, এডাও তো একখান কতা।' আসলে গ্রামের এই ধর্মভীরু মানুষগুলোকে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে দিয়ে হাবিব মুন্সীর মত মানুষেরাই যুগ যুগ ধরে বিভ্রান্ত করে রাখছে। পারুল দমে না। সে আবারও কথা বলে, ' আপনার কথা মানলাম চাচাজী। মেয়েদের পর্দার প্রয়োজন আছে। এখন ধরেন মেয়েরা যদি শিক্ষিত না হয়, তাঁরা লেখাপড়া না করে তবে কি তাঁরা ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতে পারবে? হাবিব মুন্সী বলেন, ' লেখাপড়া না শিখলে কীভাবে হবে?' শুনে পারুলের চোখে আগুন জ্বলে উঠে। বলে,' বেশ, আপনার কথা মত মেয়েদের পর্দায় থাকতে হবে। আর লেখাপড়া না করলে মেয়েরা ডাক্তার হতে পারবে না। তবে ভাবেন, আপনার মা, বোন বা মেয়ের যখন অসুখ হবে... ডেলিভারীর জন্য যখন অপারেশন করাতে হবে, তখন কি ছেলে ডাক্তার দিয়ে বেপর্দা হয়ে তাদেরকে চিকিৎসা করাবেন? তখন পর্দা নষ্ট হবে না?"

হাবিব মুন্সীর মুখে আর কোনো কথা আসেনা। কি বলবে সে? তবে শেষ চেষ্টা করে হাইস্কুলের শিক্ষক সাহাবুদ্দীন বিএসসি। সে বলে, 'আপনারা প্রাইমারী স্কুলে আপনাদের ছেলেমেয়েদেরকে ভর্তি না করালে উপবৃত্তির টাকা কিন্তু পাবেন না। টাকা কি আপনাদের লাগবে না?' আউয়াল খাঁ বসা থেকে লাফিয়ে উঠে। বলে,' আমাদের টাহার দরকার নাই। টাহা দিয়া কি করমু, পোলাপাইন ই যদি মানুষ না অয়। কি মিয়ারা? তোমরা কি চাও আমাগো পোলাপাইন আমাগো মত মুরুক্ষু থাহুক? আমার পোলা আমার মতো চা বেচুক তা আমি চাই না। আমার টাহার দরকার নাই। তোমরা কি কও মিয়ারা? এবারে সবাই একসাথে দাড়ায়... বজ্র কন্ঠে বলে, 'টাহা চাইনা, লেহা-পড়া করাইতে চাই।'

প্রগতির অন্তরায় এক গ্রুপ হাবিব মুন্সীর নেতৃত্তে কাছারি ঘর থকে বের হয়ে যায়। এরা বেশ শক্তিশালী... কিন্তু মুষ্টিমেয় সংখ্যায়। আর জাগ্রত জনতা সংখ্যায় অনেক... কিন্তু তাঁরা মোহাবিষ্ট হয়ে থাকে এই দুষ্ট চক্রের কাছে। মোতাহার তাঁদের গমন পথের দিকে তাকিয়ে ভাবে... সাতাশি হাজার তিনশত ষোলটি গ্রামের ভিতরে চার হাজার চারশত ছিয়াশি টি ইউনিয়ন পরিষদ... প্রতি ইউনিয়ন পরিষদে একজন করে মোতাহার ... মোট ৪৪৮৬ জন মোতাহার... আর হাবিব মুন্সীর নেতৃত্তে দুষ্ট চক্রের ৫ জন করে ধরলেও ওরা ২২৪৩০ জন। আর বাকীরা সাধারণ জনগন! তাহলে সাড়ে ষোল কোটি থেকে মাত্র এইক'জন মানুষকে উপড়ে ফেললেই কি দেশটা সোনার বাংলায় পরিণত হবে?

একটা দিগন্তপ্রসারী চিন্তা বিদ্যুৎ চমকের মতো মোতাহারের মাথায় খেলে যায়... নিমিষে। পারুলের দিকে তাকায় সে! চোখে মুগ্ধতা ছাড়াও আরো কি যেন রয়েছে। পারুল সে দৃষ্টির মুগ্ধতাকে চিনতে পারে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবে, সামনে আরো জটিল কিছু একটা অপেক্ষা করছে। সেই জটিলতার কেন্দ্রে সে নিজেই থাকবে। সব সময় ওকে নিয়েই সকল জটিলতার সৃষ্টি কেন হয় ভাবতে ভাবতে সে সামনের দিকে পা বাঁড়ায়।। Good Luck

(ক্রমশঃ)

বিষয়: সাহিত্য

১০৪৫ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

262090
০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:০৭
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:১২
206034
মামুন লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।Happy Good Luck
262116
০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১০:১৭
আজিম বিন মামুন লিখেছেন :

ভালো লেগেছে।পরবর্তী লেখার জন্য কিছু শুভেচ্ছা অপেক্ষমান,তবে এরা ধৈর্য্যহীন ভীষন।
এখানেই ঢুকে পড়তে চেয়েছিল!!
০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১০:৩২
206068
মামুন লিখেছেন : ভালো লাগলো আপনার এই স্টাইলটি।
অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা।Happy Good Luck
262122
০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১০:৩০
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : বিস্বাস করেন, এত লম্বা লেখা অনলাইনে পড়া কষ্টকর! যতটুকু পড়েছি ভাল লেগেছে। Happy] Star
০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১০:৪০
206076
মামুন লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকে। হ্যা, মোবাইলে নেট ইউজ করেন যারা তাদের জন্য কষ্টকর। আমি নিজেও মোবাইলে যখন ইউজ করি, এই অসুবিধাটি লক্ষ্য করি। আরো ছোট করে দিলে ৩০ টির বেশী পর্ব হয়ে যাবে, কিন্তু ১৫ পর্বে শেষ করে দিতে চাচ্ছি বিধায় এই কষ্টটুকু এবারের মত করার বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। ইনশা আল্লাহ এরপরের অন্য লেখাগুলো এতো বড় করে পোষ্ট করব না । এই লেখাটির জন্য আর কোনো অপশন দেখছি না।
অনুভূতি রেখে যাবার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাদের দুজনকে।
জাজাকাল্লাহু খাইরান।Happy Good Luck Good Luck
262133
০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১১:০১
সন্ধাতারা লিখেছেন : Chalam mamun vaiya. I am really getting confused and surprised not seeing my comment here! I thought I did first but it is not showing now. Anyhow thanks for your unique writing. Jajakallahu khair.
০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১১:২৭
206090
মামুন লিখেছেন : ওয়ালাইকুম আসসালাম আপু।
না, এই পর্বে আপনি কমেন্ট করেন নাই। এর আগের পর্বে অনুভূতি রেখে গেছিলেন বোধ হয়।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Happy Good Luck
262138
০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১১:১৮
কাজি সাকিব লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ পিলাচ পিলাচ
০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১১:২৮
206091
মামুন লিখেছেন : আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ।Happy Good Luck
262201
০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৪:০৭
কাহাফ লিখেছেন : মায়া কেউকে বুঝতে না দেয়াই ভালো।একবার মায়ায় জড়িয়ে গেলে তা থেকে বের হয়ে আসা অসম্ভব কষ্টের ব্যাপার হয়ে দাড়ায়,তার পরও মায়ায় জড়িয়ে পড়ে অনেক কিছুই,পড়তেই হয়।আপনার লেখার মায়ায় পড়ে গেছি আমি........।অনেক ভালোবাসা রইল সুদূর থেকেই। Rose
০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৮:১১
206139
মামুন লিখেছেন : কেন হৃদয় খুড়ে বেদনা জাগাতে চাইছেন ভাই?
দন্যবাদ আপনাকে অনেক অনেক।
সুদূর থেকে আপনাকেও অনেক অনেক ভালবাসা।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Good Luck Good Luck
০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৮:৪৫
206145
কাহাফ লিখেছেন : হ্রদয় খুড়ে বেদনা জাগাতে নয়,বেদনাময় ফাকা জায়গা টা ভরাট করতে চাই।যদিও কর্ম টা আমার বিরুদ্ধেই কথা বলে প্রায়ই।আল্লাহ ভরসা সবার জন্যেই।Good Luck Good Luck Good Luck
262227
০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৯:২১
মামুন লিখেছেন : আল্লাহ পাক আপনার বেদনাময় ফাঁকা জায়গা ভরাট করে দিন, আমীন। Rose Rose Rose Broken Heart Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File